Web
Analytics
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমানতালে অর্জন হোক দক্ষতাও। - Uddoktagiri Blog
ফেসবুক পেইজ ব্র্যান্ডিং
বিনা খরচে ফেসবুক পেইজ ব্র্যান্ডিং এর উপায়।
September 25, 2018
ইউটিউব থেকে আয় করার গাইডলাইন।
September 30, 2018

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমানতালে অর্জন হোক দক্ষতাও।

অর্জন হোক দক্ষতা

Share this Post on

আমি নানা বিষয়ের উপর অসন্তুষ্ট। এর বড়সড় একটা লিস্ট রয়েছে। এই লিস্টের প্রথম দিকেই আছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এই শিক্ষাব্যবস্থার উপর আমি একটু বেশিই অসন্তুষ্ট। নানা কারনে এই অসন্তুষ্ট জন্মিয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে একটি জায়গায় খুব শক্তভাবে আটকে রেখেছে। শিকলবন্দি। সেটিই হচ্ছে ‘রেজাল্ট’ ; খুব আগে থেকেই এই রেজাল্টবন্দি কারাগারে আটকে তার নতজানু হয়ে হারিয়েছে আমাদের হাজারো প্রতিভা। এর জন্য শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আমাদের চারপাশের গড়ে উঠা পরিবেশটাও কম দায়ী নয়। রেজাল্ট ভালো করতে গিয়ে সারাক্ষণ বই এর উপর পড়ে থেকে তাদের প্রতিভা একটু একটু করে ক্ষয় হতে শুরু করে। প্রতিভা বিকাশে যতটুকু সময় দেয়া দরকার, সেটি দেয়ার সুযোগ তারা পায় না। একসময় পাঠ্যবই থেকে অর্জিত জ্ঞানগুলোই শুধুমাত্র তাদের মগজে স্থির হয়ে থাকে। সেটিই তাদের একমাত্র সম্পদ নিজেকে প্রমাণ করার। কিন্তু এই যুগে মগজে জ্ঞান ভরপুর থাকলেই যে হয় না, চারপাশে কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে মুখস্থ বিদ্যার যে খুব একটা জোর নেই! জোর নেই রেজাল্টেরও! দক্ষতা ছাড়া শূন্য সব। দক্ষতা অর্জনটাই মূল; আমরা সেটি তখন বুঝতে পারি, কিন্তু তখন সময়টা আসে বড্ড অসময়ে। আপনি যদি সময়ের চিন্তা সময়ে না করে একটি উপলব্ধিতে আসতে না পারেন, অসময়ে সেই উপলব্ধিতে এসে নিজের ভুল বুঝতে পারলেও খুব একটা কাজ হয় না। কারণ সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়। উপলব্ধি অর্জনটাও।

ছোট থেকেই আমাদের শিখানো হয় পাঠ্যবই গিলো, তাতেই সীমাবদ্ধ থাকো।  এরপর যত্নসহকারে পরীক্ষা দিয়ে একটা ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হও। রেজাল্ট ভালো হলেই তুমি সফল, এর বাইরে নিজের মতো করে জীবন সাজাতে না পারলেও তুমি সফল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রেজাল্টই প্রকৃত সফলতা নয়। এই সফলতা আপনার পড়াশোনায়-মেধায়, জীবন গঠনে নয়।

এইযে দেশে এত্তো বেকার, সব বেকারই কিন্তু অশিক্ষিত না। বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই বেশি। অশিক্ষিতরা মোটামুটি যেকোনো একটা বিষয়ে কাজ শিখে তারা নিজেদের মতো করে জীবন গড়ে নেয়। তাদের কাজগুলো আমাদের চোখে ছোট হতে পারে, তবে তাদের জীবনই প্রকৃত অর্থে সম্মানের। তবে বিপত্তি ঘটে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিয়ে। তাদের সবার থাকে অহংকারপূণ্য রেজাল্ট। জিপিএ থেকে সিজিপিএ সবই সেরাটা। কিন্তু এই ভালো রেজাল্ট তাদের কর্মসংস্থান দিতে পারে না কেন? দক্ষতারই অভাব। নিজেকে তৈরি করার ব্যর্থতা।

চাকরি পায় না দুই কারণে। প্রথম কারণ, শিক্ষিতরা চাকরিতে উত্থাপিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে না। তাদের ঝরে পড়তে হয় শুরুতেই। দ্বিতীয় কারণ, শিক্ষিতরা তাদের ডিগ্রির বহর এর সাথে চাকরিতে উত্থাপিত পদটি তাদের জন্য উপযোগী নয় বলে মনে করেন। কিন্তু তাদের ডিগ্রির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণত চাকরিতে তারা তাদের প্রমাণ করতে গিয়ে সেখানে ব্যর্থ হয় বারবার। তারপরেও তারা ছোট পদের চাকরি নিতে চায় না, কর্মহীনই থাকে। কারণ হয়তো তারা শিখেছে আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচবো। কিন্তু ছোট পদে চাকরি না করে কর্মহীন থাকলে যে আত্নসম্মান সবথেকে বেশি ক্ষুণ্ণ হয় তারা সেটি শিখলো না! সুতরাং দুটি কারণই একটি কারণের উপর সেঁটে গেল; দক্ষতার প্রমাণ করতে না পারাই মূল কারণ।

আমি একটা বিষয় মেনে নিলাম, দেশে কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত নয়। তবে আপনি এটিও অস্বীকার করতে পারবেন না, দেশে কর্মসংস্থানেরও অভাব নেই! জবস সাইট, নিউজপেপার, সোস্যাল সাইটে লাখ লাখ চাকরির অফার পড়ে আছে। এখন ফেসবুকও জবস অপশন চালু করেছে, অল্প কয়েকদিনেই সেখানে বিশাল একটা চাকরির বাজার তৈরি হয়ে গেল। চাকরি দিতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তো তাদের দক্ষতা এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী লোক খুঁজে পাচ্ছে না! যদি পায় তাহলে এতো চাকরি খালি পড়ে আছে কেন?! যদি লোক খুঁজে পায় তাহলে চাকরির বাজার বাড়ছে না?

অনলাইনে একটা ফিচার পড়লাম। কুয়েট থেকে পড়াশোনা করে সিজিপিএ খুব একটা ভালো না হলেও তিনি মাইক্রোসফটে জব করছেন। তারই ভাষ্যমতে, আমাদের জন্য এখন সিজিপিএ খুব একটা গুরত্বপূর্ণ না, গুরত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন। চারপাশ থেকে দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।  বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের এই যুগে সবারই দক্ষতার উপর সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত।

শিক্ষাব্যবস্থাকে দোষারোপ করেই শুরু করলাম। এখন আমাদের নিজেদেরকে দোষারোপ করে শেষ করা দরকার। আমরাও কম দায়ী না। কারণ আমরা পরিবর্তনে বিশ্বাসী না। নিজেকে স্রোতের বাইরে নিয়ে আসতে আমরা সবথেকে বেশি হীনমন্যতায় ভুগি। কথা আছে, নিজে ঠিক থাকলে সব ঠিক। সুতরাং আমরা যদি এখন থেকে এই উপলব্ধিতে আসতে পারি, তাহলে সময়ের ভারসাম্যতা ঠিক থাকবে। নিজে যদি ঠিক থেকে এগুতে পারি তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের জন্য বাঁধার কারণ হবে না। অনেকেই তো সেটির প্রমাণ রেখে গেলেন, রাখলেন এবং রাখবেন। আপনিও ‘রাখবেন’ শ্রেণির একজন হোন। জ্ঞান অর্জনের সাথে বাস্তবে প্রয়োগের উপায় বের করুন। উপায় এর অভাব নেই চারপাশে, শুধুমাত্র নিজের সদিচ্ছার থাকা চাই।

সুতরাং আমরা দক্ষতা অর্জনে সবথেকে বেশি আগ্রহী হই। নিজেকে বিলিয়ে দিই। মুখস্থ বিদ্যা কিংবা পাঠ্যবইয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হওয়ার মন মানসিকতা এখন থেকে ঝেড়ে ফেল দিই। পড়াশোনার সাথে আমাদের দক্ষতা অর্জন হোক উন্মুক্ত। জানার কৌতুহল থাকবে বিক্ষিপ্ত, স্বাধীন; কোনো সীমাবদ্ধতা যাতে ছুঁতে না পারে। চারপাশ থেকে কুড়িয়ে নিব দক্ষতা। আমাদের উপলব্ধিতে আসুক, প্রতিভার সাথে পড়াশোনার বিষয়ের যোগসূত্রতা রেখে দক্ষতা অর্জন করে আগাতেই পারলেই জীবনের সফলতা খুব কাছ থেকে ধরা দিবে।

মাসুদ আনসারী

লেখক, স্টাডি অব ই-কমার্স

Share this Post on