উদ্যোক্তা পরিচয়ের একটি বড় সমস্যা হয়ে গেছে আমাদের মাথায় বসানো কিছু শব্দ। কিছু ধনাত্মক শব্দের অতীব ঋণাত্মক ব্যবহার। আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে যাদের কথা বলছি আমাদের সমাজে তাদের পরিচয় হয় “ব্যবসায়ী” শব্দটি দিয়ে। আমরা ধরে নেই সেটি খুব খারাপ কাজ, শুধু খারাপ মানুষেরাই শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ী হয়ে যায়। তাছাড়া ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা। এরকম আরও একটি শব্দ হচ্ছে- ‘মুনাফাখোর’। শব্দটি যেন- ‘ঘুষখোর’ এর মতই ঘৃণ্য। বক্তৃতা বিবৃতিতে এই শব্দটি ঘুষখোর ধরনের শব্দগুলোর সাথে নিয়মিত ব্যবহার হয়। ব্যবহারের কারণে এই শব্দগুলো শুনলে মনের অজান্তেই- অশিক্ষিত, সংস্কৃতিহীন, লোভী, ধূর্ত ও চরিত্রহীন একজন ব্যক্তির ছবি ভেসে ওঠে। এইসব ভুল ধারণার কারণে দেখা যায়, একজন উদ্যোক্তার সাথে গার্ডিয়ানরা মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না! হাস্যকর হলেও ব্যাপারটা সত্য, আমার কাছে অনেক উদ্যোক্তার দুঃখ ভরা তথ্য আছে!
অথচ, স্বার্থক ও সফল উদ্যোক্তা হবার সঙ্গে সেগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। ব্যবসা করা ও মুনাফা নেয়া আইনগতভাবে (ও ধর্মমতে) স্বীকৃত ও বৈধ কাজ। সেই কাজটি ভালভাবে করার জন্য অত্যন্ত যোগ্য এবং বহু গুণের অধিকারী হতে হয়। একটি ব্যবসায়ের উদ্যোগ- কিছু লোক, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপকার করে, কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতিও করতে পারে। উপকারের পরিমাণ বেশি হলে সেই ব্যবসায়ী কেন সম্মানী হবেন না!
তার উপরে উদ্যোক্তা মানে ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেক কিছু। তিনি অত্যন্ত উঁচু মানের একজন শিল্পী। যিনি শুধু ব্যবসা পরিচালনা করেন না? নতুন ব্যবসা সৃষ্টিও করেন। সেটি থেকে কখনও মুনাফা নেন, কখনও শুধুমাত্র পারিশ্রমিক। তাঁর টাকার পরিমাণ সফলতা মাপার একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড বটে। তবে তা একমাত্র মানদন্ড নয়। উদ্যোক্তা হতে সাধারণ যোগ্যতার বাইরেও অনেক যোগ্যতা লাগে। চরিত্রহীন হওয়া সফল উদ্যোক্তা হওয়ার কোন যোগ্যতা নয়। বরং সফল হবার জন্য চরিত্রবান হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা। প্রতিটি পেশায় ভাল ও খারপ মানুষ থাকে। যারা আজ সফল, তাদের বেশিরভাগ কাজের উদ্দেশ্য ও ফলাফল তুলনামূলক ভাল।
এসকল কারণে উদ্যোক্তারা পরিচয় দিতে লজ্জা পান। কিন্তু এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। লজ্জা পেলে চলবে না। গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সাথে নিজের এবং অন্য উদ্যোক্তার পরিচয় দিতে হবে। গুরুত্ব দিতে একসময় পরিচয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়। পরিচয়টি দিতে হবে টাকার পরিমাণ নয়, কাজের ধরণ এবং তার ফলাফল দিয়ে।
ফাউন্ডার ও সি.ই.ও