Web
Analytics
উদ্যোগে বিশ্লেষণের ক্ষমতা কেন গুরুত্বপূর্ণ? - Uddoktagiri Blog
ই-কমার্স সাইটের সাধারণ কিছু ভুল
জেনে নিন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাধারণ কিছু ভুল।
March 2, 2019
উদ্যোক্তার পরিচয় নাকি পরিচয়ে উদ্যোক্তা_
উদ্যোক্তার পরিচয় নাকি পরিচয়ে উদ্যোক্তা?
April 29, 2019

উদ্যোগে বিশ্লেষণের ক্ষমতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ব্যবসাকে সঠিকভাবে গাণিতিক ছকে ফেলতে পারলে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায় ব্যবসাকে সঠিকভাবে গাণিতিক ছকে ফেলতে পারলে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়

Share this Post on

ইতিহাস থেকে জানা যায়, উদ্যোক্তারা তথ্য–উপাত্ত নয়; বরং সাহসকে পুঁজি করেই ব্যবসা করতে চান। তাঁরা মনে করেন, বাজার পরিকল্পনা তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী করলেই সফল হওয়া সম্ভব। নিজের স্বাভাবিক বিচার–বিশ্লেষণের ওপর ভরসা রেখে উদ্যোক্তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ কেউ সফল হন। আবার অনেকে একটি পরিকল্পনা সফল না হলে আরেকটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এভাবেই হয়তো একসময় একজন উদ্যোক্তার সাহসের বুকে চিড় ধরে।

কিন্তু এখনকার সফল উদ্যোক্তাদের দিকে তাকালে দেখা যায় একেবারেই ভিন্ন চিত্র। তাঁরা আদতে তথ্য–উপাত্ত এবং বাজার বিশ্লেষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক, অ্যামাজন, অ্যাপল, নেটফ্লিক্স বা গুগলের দিকে তাকাই, যদি দেখি চীনের সফল অনলাইন ব্যবসা বাইডু বা ট্যানসেন্ট, দেখা যাবে এসব উদ্যোগে তথ্য–উপাত্ত বা ব্যবসা বিশ্লেষণই সফলতা এনে দিয়েছে। এই বড় বাজারসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যবিজ্ঞান (ডেটা সায়েন্স) এবং বিশ্লেষণকে (অ্যানালাইটিকস) তাদের কৌশল ও কার্যক্রমের মূল ভিত্তি মনে করছে।

 

বাজেট ও উদ্যোক্তাঃ

স্বপ্নকে সফল ব্যবসায় রূপান্তর করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন হয় মূলধনের হিসাব। মূলধনের হিসাবের পরই অপারেশন চালানোর জন্য কী পরিমাণ টাকা লাগবে তা হিসাব করে বের করে ফেলা হয়। এভাবে একটার পর একটা হিসাবের স্তরে স্তরে গাঁথা হয় স্বপ্নের বা পরিকল্পিত ব্যবসার সফলতার কর্মপরিকল্পনা। ব্যবসাকে সঠিকভাবে গাণিতিক ছকে ফেলতে পারলে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিফলতার ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করার মাধ্যমে সফল হওয়া যায়।

 

বাজার তথ্য ও উদ্যোক্তাঃ

আবার বাজার তথ্যের ভিত্তিতেই তৈরি করতে হয় পণ্যের পরিমাণ পরিকল্পনা; যা পণ্য উৎপাদন শ্রমিক, কারখানা ও মজুত খরচকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কথায় আছে ‘কিনতে না জিতলে বিক্রিতেও কষ্ট।’ বাজার তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় বাজারের চাহিদা, অপেক্ষাকৃত কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য সর্বাধিক জনপ্রিয়, পণ্য প্রতিযোগিতা, বাজারের ওপর দখল, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং পদ্ধতি, প্রচারণাসহ আরও বহুবিধ তথ্য; যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক বাজারকৌশল গ্রহণ করা যায় এবং ব্যবসায় সফলতা আনা যায়।

 

কাস্টমার ও উদ্যোক্তাঃ

কাস্টমারের (ক্রেতা) আচরণ ও ব্যবসার প্রসারণ একে অপরের পরিপূরক। সন্তুষ্ট কাস্টমার মানেই সফল ব্যবসা। আর কাস্টমারের এই আচরণ জানতে গেলে অবশ্যই আমাদের কাস্টমার সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। উদ্যোক্তা যদি জানতে পারেন, তাঁর কোনো ব্যবসায়িক আচরণ বা প্রচারণায় কাস্টমার খুশি থাকেন, তবেই ব্যবসা সফল হবে। আর এ তথ্য জানার জন্য অবশ্যই কাস্টমার তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমেই তা নিরূপণ করা সম্ভব। কাস্টমারের তথ্যের মাধ্যমেই পণ্য নিরূপণ, মূল্য নির্ধারণ, বাজার বিপণন–কৌশল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

এখনকার উদ্যোক্তাদের আর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করলে চলবে না। তাঁদের হতে হবে সফল এবং প্রগতিশীল ব্যবসায়ী। তাঁদের বিশ্লেষণভিত্তিক মনন এনে দিতে পারে সর্বোচ্চ সাফল্য।

আর তাই প্রত্যেক উদ্যোক্তারই প্রয়োজন ব্যবসা বিশ্লেষণের জ্ঞান। তার সঙ্গে তাঁদের শেখা উচিত মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো জরুরি সফটওয়্যারের কাজ। মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা খুব সহজেই বাজেট তৈরি করাসহ বাজার বিশ্লেষণের কাজ করতে পারবেন। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে আইডিয়া উপস্থাপনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের টুল তৈরি করা সম্ভব, যা ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করে।

আসলে সফলতার মূলমন্ত্র বলে কিছু নেই। কিন্তু বিশ্লেষণ করে কাজ করলে সফলতাকে ছোঁয়া খুবই সহজ। বিশ্লেষণ ব্যবসার ঝুঁকি কমাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি ব্যবসায়িক খরচও আয়ত্তের মধ্যে ধরে রাখে, যা একজন উদ্যোক্তাকে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এ সময়ের উদ্যোক্তাঃ

এখনকার সময়ের সফল কয়েকজন উদ্যোক্তার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তাঁদের কার্যক্রমের পেছনেও বিশ্লেষণী দক্ষতার বড় অবদান।

ড্রিংকওয়েলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহপ্রতিষ্ঠাতা, তরুণ উদ্যোক্তা মিনহাজ চৌধুরী। গ্রামের জনগণের জন্য বিশুদ্ধ ও আর্সেনিকমুক্ত খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করতে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি গণস্বাস্থ্য বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। ক্লিনিক্যাল গবেষণা সহকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হাসপাতালে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি ‘ফিসক্যাল পলিসি ইন্টার্ন’ হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বাজেট অ্যান্ড ট্যাক্স পলিসি ইনস্টিটিউটসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে। এই নানা ধরনের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তাঁর বিশ্লেষণী সক্ষমতাকে শাণিত করেছিল এবং নতুন ব্যবসাকে সফলতার সঙ্গে পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতে সাহায্য করেছে।

‘লাইট অব হোপ’ নামে একটি প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা মো. ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া একজন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলী, পড়েছেন গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে। তাঁর সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করে। তাঁর প্রকৌশলী বিশ্লেষণ জ্ঞান এবং উন্নয়ন খাতে ছয় বছর কাজের অভিজ্ঞতাই নতুন ভাবনা ‘লাইট অব হোপ’ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।
আবার আদনান ইমতিয়াজ, যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সেবা এক্সওয়াইজেড, তাঁর প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে একটি মোবাইল অ্যাপ দিয়েই ঘরের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। স্নাতক শেষ করেই তিনি কাজ করেছেন গ্রামীণফোন, নকিয়া এবং এলএম এরিকসনের মতো প্রতিষ্ঠানে। তাঁর প্রথম উদ্যোগ জিলাপি ডটকম নামে একটি অনলাইনভিত্তিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাই হয়তো তাঁকে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সাহস দিয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ জ্ঞান খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যবসাসফল আইডিয়ার পেছনেই দেখা যাবে বিশ্লেষণী ক্ষমতার একটা গল্প আছে। তাই ব্যবসা শুরুর আগে নিজের ভেতরে এই দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে।

লেখকঃ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানার ও অ্যানালিস্ট, খণ্ডকালীন শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো 

Share this Post on