কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার পর ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য যে রিপোর্টে তুলে ধরা হয় সে রিপোর্টটিকে ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট বলা হয়।
বিভিন্ন অনার্স কোর্সের অংশ হিসেবে ইন্টার্নশিপ করতে হয় এবং ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শেষ করার পর ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট সাবমিট করতে হয়। অন্যথায় আপনার অনার্স কোর্স সম্পন্ন হবে না। আমাদের দেশে সাধারণত অনার্স কোর্সের শেষ পর্যায়ে এসে ইন্টার্নশিপ করতে হয়।
এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যেকোনো সময় ইন্টার্নশিপ করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট তৈরি করতে হবে না।
ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট আপনাকে একজন সুপারভাইজারের অধীনে তৈরি করতে হবে। আপনার ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের টপিক কী হবে তা আপনার সুপারভাইজার নির্ধারণ করে দিতে পারেন আবার অনেক সময় আপনি আপনার পছন্দের টপিক নিয়েও কাজ করতে পারবেন।
যেমন, আপনি যদি ব্যাংকে ইন্টার্নি করে থাকেন তাহলে ব্যাংকের যেকোনো বিভাগ যেমন, জেনারেল ব্যাংকিং, রেমিটেন্স, অ্যাকাউন্টস, অথবা লোন সেকশনকে আপনার ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের টপিক হিসাবে বেছে নিতে পারেন।
একটি ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের মূলত আটটি অংশ থাকে, তবে মূল অংশগুলো শুরু করার আগে ছোট ছোট আরো ২-৩টি অংশ যুক্ত করতে হবে, যেমন টেবিল অব কন্টেন্ট, সার্টিফিকেট অব ইন্টার্নশিপ, একনোলেজমেন্ট ইত্যাদি।
এসব অংশে কী কী উল্লেখ করতে হবে, চলুন জেনে নিই।
রিপোর্টের প্রথমেই কোন পেইজে কোন টপিক রয়েছে তা টেবিল অব কন্টেন্টে ক্রমানুসারে উল্লেখ করতে হবে।
ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শেষ হবার পর আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টার্নি করেছেন, সেখান থেকে আপনাকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে, সেই সার্টিফিকেটের একটি কপি আপনাকে ইন্টার্নশিপ রিপোর্টে যুক্ত করে দিতে হবে।
এ অংশে আপনার রিপোর্ট তৈরিতে যারা সাহায্য করেছেন, যেমন: আপনার সুপারভাইজার অথবা যে কোম্পানিতে আপনি ইন্টার্নি করেছেন সেখানের ম্যানেজারের বা আপনার কোনো বন্ধু যিনি আপনাকে রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হবে।
উপরোক্ত অংশগুলো উল্লেখ করার পর, ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের মূল অংশ লেখা শুরু করতে হবে। এবার চলুন দেখে নিই, মূল অংশগুলোতে কী কী বিষয় উল্লেখ করতে হবে-
১. এক্সিকিউটিভ সামারি (Executive Summary)
পুরো রিপোর্টের মূল সারাংশ তুলে ধরা হয় এক্সিকিউটিভ সামারিতে। রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো এ অংশে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হয়।
২. ইন্ট্রোডাকশন (Introduction)
এক্সিকিউটিভ সামারির পরে যে অংশটি আসে তা হলো ইন্ট্রোডাকশন, যা এক্সিকিউটিভ সামারির তুলনায় একটু বড় হয়।
ইন্ট্রোডাকশনে আপনার রিপোর্টের উদ্দেশ্য, ক্ষেত্র, কার্যপদ্ধতি, সীমাবদ্ধতা এছাড়াও আপনি কোন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন অর্থাৎ প্রাইমারি অথবা সেকেন্ডারি সোর্স নাকি দুটি সোর্সের সমন্বয়ে রিপোর্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করতে হবে।
৩. আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নশিপ করেছেন সে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা (A General Idea about Industry)
আপনি যদি ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নশিপ করে থাকেন তাহলে এ অংশে ব্যাংকিং সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরতে হতে হবে, যেমন: ব্যাংক, ব্যাংকিং ও ব্যাংকারের সংজ্ঞা, ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য, ব্যাংকিং ব্যবসায়ের উৎপত্তি, ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশ, বাংলাদেশে ব্যাংকিং সিস্টেমের ইতিহাস, আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকের সংখ্যা, ব্যাংকের প্রকারভেদ ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। তবে এ অংশটি অপশনাল, আপনি চাইলে দিতে পারেন আবার বাইলে বাদও দিতে পারেন।
৪. আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেছেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা (Organizational Overview)
এ অংশে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরতে হতে হবে। যেমন: আপনি যদি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করে থাকেন তাহলে সে ব্যাংকের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, মিশন, ভিশন, কার্যপদ্ধতি, বোর্ড অব ডাইরেক্টরের তালিকা, গ্রাহক সংখ্যা, ব্রাঞ্চ সংখ্যা, অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি ইত্যাদিসহ যাবতীয় তথ্যাবলী উল্লেখ করতে হবে।
৫. ইন্টার্নশিপ (Internship)
এ অংশে ইন্টার্নশিপ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধতে হবে। ইন্টার্নশিপ কী, প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব, ইন্টার্নশিপ করার উদ্দেশ্য, ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে আপনি কী কী শিখতে পারলেন, একজন ইন্টার্ন হিসাবে আপনার দায়িত্ব কী ছিলো এসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
৬. ফাইন্ডিংস ও রেকোমেন্ডেশন (Findings And Recommendation)
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নি ও যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনি কী বুঝতে পারলেন অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানে কী ধরণের সুযোগ সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কোন ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে আছে, কেন পিছিয়ে আছে ইত্যাদি বিষয় ফাইন্ডিংস অংশে উল্লেখ করতে হবে।
রেকোমেন্ডেশন অংশে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজস্ব মতামত উল্লেখ করতে হবে। কীভাবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা যায়, আরো উন্নতি সাধন করা যায়, অথবা কোন ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন, এসব সম্পর্কে নিজস্ব মতামত উল্লেখ করতে হবে।
৭. কনক্লুশন (Conclusion)
এ অংশে মূলত আপনি সংক্ষেপে বর্ণনা করবেন, আপনি যে ইন্ডাস্ট্রি ও প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি করেছেন তা কীভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানটি যদি কোনো সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে থাকে তাহলে তা উল্লেখ করতে হবে।
সেইসাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু প্রসংশামূলক বাক্য, যেমন: কী কারণে আপনি এই প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা বা সেরা মনে করেন, কীভাবে কোম্পানিটি উন্নতি লাভ করেছে, কী কারণে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান উন্নত ইত্যাদি উল্লেখ করে লেখা শেষ করতে পারেন।
৮. রেফারেন্স (Reference)
কনক্লুশনের পরে সর্বশেষে যে অংশটি লিখতে হবে তা হলো রেফারেন্স। আপনি যদি রিপোর্ট তৈরির জন্য কোনো বই, জার্নাল বা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে সে সূত্রগুলো কনক্লুশনের পরে রেফারেন্স অংশে ক্রমানুসারে উল্লেখ করতে হবে।