Web
Analytics
হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের ৭ অভ্যাস। - Uddoktagiri Blog
অনলাইন বিজনেস আইডিয়া
পুঁজি লাগবে না এমন ১৪টি অনলাইন বিজনেস আইডিয়া
October 16, 2018
ইন্টার্নশিপের উপকারিতাগুলা
কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা? ইন্টার্নশিপের উপকারিতাগুলা জেনে নিন।  
October 20, 2018

হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের ৭ অভ্যাস।

হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের ৭ অভ্যাস

Share this Post on

ধরুন আপনি পরীক্ষায় ‘এ প্লাস’ চান। এখন আপন সরাসরি গ্রেড শীটে এ প্লাস বসিয়ে দিতে পারবেন না। সেটা আপনার শিক্ষক করবেন। কিন্তু ‘এ প্লাস’ পেতে যা যা করা যায়, সেগুলা আপনি করতে পারবেন। এ প্লাস পাওয়ার জন্য কাজ না করে যদি আপনি পাবো, পাবোনা, পেলাম না, আদৌ কি পাবো, এসব নিয়ে চিন্তা করেন তাহলে আপনি একজন Reactive ব্যক্তি। কিন্তু ‘এ প্লাস’ পেতে যদি আপনি পড়াশুনা করেন, ক্লাস টেস্ট দেন ঠিক মত, অ্যাসাইনমেন্ট দেন ভালো করে, প্রজেক্ট করেন ঠিক মত –  তাহলে আপনি একজন Proactive ব্যক্তি।

 

আবার ধরুন, দেশের সব জায়গায় দূর্নীতি আর দূর্নীতি। আপনি নিউজ পড়েন সারাদিন, দেশের কিছু হবেনা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তাহলেও খুব একটা কিছু হবার সম্ভবনা নেই, যদিনা আপনি উপরের লেভেলের কেউ হন। এক্ষেত্রেও আপনি রিএক্টিভ আচরন করলেন। আমাদের নিজের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। আপনি যদি আপনার কাজটা ঠিক মত করতে পারেন, ট্রাফিক রুল মানেন, দেশের নিয়ম মানেন, ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলেন , এগুলা সেগুলা যেখানে আপনার নিয়ন্ত্রন আছে। সেটা ভালো করে করতে পারেন। তাহলে আপনি প্রোএক্টিভ।

 

আপনি কাউকে ভালোবাসেন। তাকে জোর করে আপনার ভালোবাসায় কিন্তু হা করাতে পারবেন না। সে যা চায়, সেগুলা যদি প্রোএক্টিভলি করেন, নিজেকে সেভাবে রেডি করে। তাহলে আপনি প্রোএক্টিভ। হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের প্রথম গুন, সে প্রোএক্টিভ থাকে।

 

বিগিন উইথ দি এন্ড ইন মাইন্ড। এই লাইন যখন আপনি পড়ছেন, এবার একটু থেমে নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন, আপনি নিজের সারা জীবন নিয়ে যা বলতে চান বা হতে চান, সেটা বলা বা হওয়ার জন্য যা যা করা লাগে, আপনি কি তা করছেন? উত্তর দিতে গেলে প্রায় আমাদের সবার লাইফস্ট্যাইলে চেঞ্জ আনতে হবে।

 

ধরুন, আপনি চান – সবাই বা আপনি আপনার জীবন সম্পর্কে এক মুহুর্তে বলবে, সৎ মানুষ ছিলেন। তাহলে সৎ থাকার জন্য আপনি সব করছেন এখন? হয়ত করছেন, হয়তবা না। এমন চিন্তা দিয়ে জীবন চালানোই ইফেক্টিভ মানুষের দ্বিতীয় গুন। বিগিন উইথ দি এন্ড ইন মাইন্ড।

 

ঠিক এই মুহুর্তে যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জিনিস কি? অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ কি, যা করতে চান? আপনি হয়ত বলবেন, জাভা শেখা! লারাভেল শেখা কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর জন্য নতুন কিছু শেখা, কিংবা পেপার পাব্লিশ করা কিংবা পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলবো, পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট বই পড়া। আপনি বা আমি কখনোই বলবোনা, আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ ফেসবুক ব্যবহার করা, আইপিএল, লা-লীগা দেখা। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আপনি হয়ত ফেসবুক চালাচ্ছেন, আমিও তাই করছি। কিংবা খেলা দেখছি, কিংবা বেদরকারী চ্যাট করেই যাচ্ছি।

 

আমরা যা বলি বা হতে চাই এবং আমরা আমাদের সময় যে জায়গায় ব্যয় করি, দুইটার মধ্যে ভয়াবহ দূরত্ব রয়েছে। হাইলি ইফেক্টিভ মানুষদের তিন নাম্বার অভ্যাস হল, প্রথম দরকারী কাজ প্রথমে করা। যদি, বলা হয় গুরুত্বপূর্ন কাজ বই পড়া, তাহলে সে বইই পড়বে, অন্য কিছু না।

 

ধরা যাক, আমি জাভা নিয়ে একটা বই লিখেছি। আপনিও লিখেছেন। এখন আমি যদি আপনার বই পড়ে দেখি, এবং আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি, তাহলে আপনার প্রচার ও বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনি খুশি হয়ে আমার বইও আপনার বন্ধদের সাথে শেয়ার করবেন। দুইজনের জন্যি উইন-উইন সিচুয়েশান। দুই জনের জন্যই ভালো। কিন্তু যদি এমন হত, আমি আপনার বই ভালো না লিখে একটি নেগেটিভ রিউভ দিয়ে আশা করে বসে থাকলাম যে, এর ফলে আমার বই এর বিক্রি বেশি হবে। তাহলে আপনার বন্ধুরা তো কিনতো নাই, উল্টো অন্যদেরও না করতো। সব কিছু জিরো সাম গেইম চিন্তা না করে হাইলি ইফেক্টিভ মানুষেরা এসব সিচুয়েশানে উইন-উইন চিন্তা করে। উইন-উইন চিন্তা করা হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের চার নাম্বার অভ্যাস, যেখানে আপনি জেতা মানে আমি হেরে যাওয়া না বা আমি জিতে যাওয়া মানে আপনি হেরে যাওয়া না, বরং দুই পক্ষই জিতে যাওয়া।

 

প্রথমে চিন্তা করুন বুঝতে, পরে অন্য কেউ আপনাকে কিভাবে বুঝবে সেই স্টেপ নিন। আমি চাই সবাই আমার বই কিনুক। এখন আমি যদি বলা শুরু করি, আমার বই কিনুন, আমি ২ মাস ধরে লিখেছি, অনেক কষ্ট করেছি, বইটা ভালো। আমি জানিনা এর ফলে কি কাজ হবে, তবে আমি সিউর যদিনা আপনার কাজে লাগে, আপনি বইটা কিনবেন না। আপনি বইটা তখনই কিনবেন, যখন এটা আপনার প্রয়োজন। আপনার কাজে আসবে, আপনার দরকার। আমি যতই বলি আমি কত ডেডিকেটেড ছিলাম, কত ঘন্টা দিয়েছি – এগুলা শুনে আপনার কাজ নেই। হাইলি ইফেক্টিভ মানুষদের পঞ্চম অভ্যাস, তারা প্রথমে বোঝার চেষ্টা করবে, মানুষ কি চায়, কিভাবে তাদের উপকার হবে, কোনটা মানুষের দরকার। তারপর সেই অনুসারে স্টেপ নিবে। আমার মধ্যে যদি এই অভ্যাস থাকে, তাহলে আমি প্রথমে দেখবো, বাংলাদেশে লাখ লাখ কম্পিউটার সায়েন্স শিক্ষার্থী আছে, প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জাভা পড়ানো হচ্ছে, জাভা শিখে অ্যাপ বানানো সম্ভব, জাভাতে ভালো ক্যারিয়ার সুযোগ আছে। এগুলা বোঝার পরই আমি হয়ত সিদ্ধান্ত নিবো, বই লেখা মন্দ হবেনা। এবং আমি সেভাবেই রি-প্রেজেন্ট করবো রাদার দ্যান, আমার কত কষ্ট হইসে কত সময় লাগসে –  এগুলা বলা।

 

The whole is better than sum of it’s parts. ধরুন, আপনি ভালো অ্যাপ বানাতে পারেন। আপনার বন্ধু ভালো মার্কেটিং পারে। এখন আপনার অ্যাপ যদি আপনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেন, তাহলে হয়ত কিছু ডাউনলোড/সেল হবে। কিন্তু মার্কেটার বন্ধুকে যদি আপনার সাথে যুক্ত করেন, তাহলে সে সেল এর পরিমান এমন জায়গায় নিয়ে যাবে, যা আপনার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তারামানে, দুইজন একসাথে হয়ে যুক্ত হয়ে ভালো কিছু করে ফেল্লেন।

 

এরপর আপনারা চিন্তা করলেন, অ্যাপের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বেটার করতে পারলে, সেল/ডাউনলোড আরো বুস্ট করবে। আপনার ইউ এক্স ডিজাইনার বন্ধুকে যুক্ত করলেন আপনাদের সাথে। এবার দুর্দান্ত একটি প্রোডাক্ট তৈরী হল। আপনার এই বন্ধুদের যুক্ত করার ক্ষমতাকে বলা হয় সিনারজাইজ (Synergize)। অবশ্যই এটা সব সময় সফল হবেনা বা রাইট পার্সনকে আপনি পাবেন এমনও না। কিন্তু এই অপর্চুনেটি সবসময় খুঁজে হাইলি ইফেক্টিভ পার্সন। সিনারজাইজ করা। এই ষষ্ঠ অভ্যাসটি হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের মধ্যে থাকা চাই।

 

কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা কোম্পানীর একটা টিম আসে তাদের অ্যাপ নিয়ে কথা বলতে। ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের অ্যাপ লাইভে চলে আসার কথা। তেমনটাই তারা বলছিলো। আমি এর আগে প্রায় ২ মাস ধরে দেখছি তারা একটি অ্যাপকে মডিফাই করার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু বাহিরের ডেভেলপার এর ডেভেলপ করা, ডেপ্রিকেশন এবং আরো নানা কারনে তাদের কাজগুলো স্মুথ ছিলোনা। ১ সপ্তাহের জায়গায় ২ মাস লাগার পর আমার কাছে আসলো তারা পরামর্শের জন্য। আমি দেখে বুঝলাম, মডিফাই করতে গেলে আদৌ হবে কি হবেনা, তার ইয়াত্তা নেই। বল্লাম, তোমরা নতুন করে মিনিমাম ফিচার দিয়ে তৈরী কর। ১৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। তারা পরামর্শ পেয়ে হাসিমুখে চলে গেল। ১৫ দিন লাগলে দেরি হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে তারা প্রায় আড়াই মাস নষ্ট করেছিলো। হাইলি ইফেক্টিভ মানুষের সপ্তম অভ্যাস, শার্পেন দ্যা স (Sharpen the saw)।

 

উপরের গল্প পড়ে কার কি মনে হয়েছে জানিনা কিন্তু এমনটা প্রতিদিন আমাদের জীবনে ঘটে, প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন। আমরা প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট বই পড়ার সময় পাইনা, বই অনেক সময় নিয়ে ফেলবে তাই। কিন্তু লঙ্গার গোল হিসেব করলে, এই জিনিসগুলো আমাদের পিছিয়ে নিচ্ছে।

 

আপনার সামনে এক লোক ঘন্টা খানেক গাছ কাটছে, যেটা কাটতে ৩০ মিনিটও লাগার কথা না। আপনি তাকে পরামর্শ দিলেন, ‘শার্প দ্যা স’ – ‘করাতে ধার দিয়ে আনো’। কিন্তু সে বল্ল, এর ফলে আমার দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু পুরো পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, করাত ধার দিয়ে না আনার কারনেই তার দেরি হচ্ছিলো। হাইলি ইফেক্টিভ পিপলের সপ্তম অভ্যাস, তারা সব সময় করাতটা শার্প করেই কাজ করে।

 

 

মোশাররফ রুবেল

লেকচারার, সাউথইষ্ট ইউনিভার্সিটি।

লিড ইঞ্জিনিয়ার,  রিসার্চ & ডেভেলপমেন্ট,

আজকেরডিল লিমিটেড।

Share this Post on