Web
Analytics
রেজুমি ও সিভির পার্থক্য নিয়ে কিছু কথা ও করণীয়। - Uddoktagiri Blog
ছাত্রজীবনে চাকরির প্রস্তুতি
ছাত্রজীবনে কীভাবে নেবেন চাকরি প্রস্তুতি !
July 22, 2018
উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য
উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে মূল পার্থক্য কি?
July 24, 2018

রেজুমি ও সিভির পার্থক্য নিয়ে কিছু কথা ও করণীয়।

Share this Post on

রেজুমি ও সিভি নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু লেখা আমার লিঙ্কডইন ফিডে দেখি। আপনাদের লেখার প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, এই লেখাটা আপনাদের জানাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করবে বলে বিশ্বাস করি। লেখাগুলো ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ও নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট গবেষণা থেকে নেওয়া। আশা রাখি আপনাদের উপকারে আসবে।

প্রথমে সংক্ষেপে দুটো বড় পার্থক্যের কথা বলি। রেজুমি ও সিভির মধ্যে প্রথম পার্থক্যটি হলো দৈর্ঘ্য। দ্বিতীয় পার্থক্যটি হলো স্থান। একটু কেমন জানি মনে হলো তাই না? আসুন, এবার একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।

প্রথম পার্থক্য হলো দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ আদর্শ রেজুমির দৈর্ঘ্য এক পাতা হয়। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষ এটা দেড় থেকে দুই পাতা হতে পারে। আমি তিন পাতার রেজুমি কখনো দেখিনি। অন্য দিকে একটি আদর্শ সিভি দুই পাতার হয়। তবে ব্যক্তি বিশেষ তা তিন থেকে পাঁচ পাতা পর্যন্তও হতে পারে। তবে আধুনিক সময়ে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সিভিও ৩–৪ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে দেখা যায়।

দ্বিতীয় পার্থক্যটি হলো স্থান। রেজুমি মূলত আমেরিকাতে ব্যবহার হয়। আমেরিকার প্রায় ৯৯ ভাগ জায়গাতেই রেজুমির ব্যবহার। আমি আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভর্তির জন্যও বায়ো ও এসের সঙ্গে রেজুমি জমা দিয়েছি। অর্থাৎ একাডেমিক ক্ষেত্রেও রেজুমির ব্যবহার হয়। তবে একাডেমিক জব ও গবেষণায় অধ্যয়নের জন্য এবং কিছু কিছু চিকিৎসা জবের ক্ষেত্রে সিভি ব্যবহার করা হয়।

অন্য দিকে সিভির ব্যবহার হয় আমেরিকার বাইরে অর্থাৎ ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াতে। এশিয়া মহাদেশে রেজুমি ও সিভির মিশ্র ব্যবহার রয়েছে। এসব দেশের চাকরিদাতা তাদের প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি আশা করে। এমনকি একজন আমেরিকান হিসেবে আমাকেও যদি এই সব দেশে চাকরি বা অন্যান্য প্রয়োজনে আবেদন করতে হয় তবে সিভি পাঠাতে হবে রেজুমি নয়।

একটি আদর্শ রেজুমিতে কী কী থাকে

একটি আদর্শ রেজুমিতে নিচের বিষয়গুলো থাকা উচিত।

  • নাম ও যোগাযোগ।
  • কর্মজীবনের সারাংশ (অপশনাল)।
  • শিক্ষা জীবনের সারাংশ।
  • কাজের/অভিজ্ঞতার ইতিহাস।
  • দক্ষতার তালিকা।
  • বিশেষ কোনো অর্জন বা পরিচয় (যদি থাকে)।

একটি আদর্শ সিভিতে কী কী থাকে

একটি আদর্শ সিভিতে নিচের বিষয়গুলো থাকা উচিত।

  • নাম ও যোগাযোগের তথ্য।
  • ব্যক্তিগত তথ্য (অপশনাল)।
  • কর্মজীবনের ইতিহাস।
  • শিক্ষার ইতিহাস।
  • পাবলিকেশন, গ্র্যান্ড, ফেলোশিপ।
  • গবেষণা ও ট্রেনিং।
  • পেশাগত যোগ্যতার তালিকা।
  • সকল সার্টিফিকেট এবং স্বীকৃতি।
  • অ্যাওয়ার্ড ও পাবলিকেশনের তালিকা।
  • পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম।
  • বুক ও আর্টিকেল।
  • লাইসেন্স ও পেশাগত সদস্যপদ।
  • দক্ষতার তালিকা।
  • শখ ও ইচ্ছা।
  • রেফারেন্স তালিকা (অপশনাল)।

রেফারেন্সের ক্ষেত্রে রেজুমিতে রেফারেন্স দেওয়ার নিয়ম নেই যদি না এমপ্লয়ার আগে থেকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে রেফারেন্স প্রদানের জন্য। সে ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন কাগজে রেফারেন্স তালিকা দিতে হবে। কিন্তু সিভির ক্ষেত্রে এখনো ইউরোপিয়ান বিশেষত ইউকের প্রতিষ্ঠানগুলো রেফারেন্স দেওয়াকে আদর্শ মনে করে। তাই সিভিতে রেফারেন্সে তালিকা যোগ করতে পারেন। আবার অনেক এমপ্লয়ারের অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন ভাবে রেফারেন্স সেকশন আছে, সে ক্ষেত্রে সিভিতেও রেফারেন্স দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

কীভাবে একটি উত্তম রেজুমি লিখব?

রেজুমি সাধারণত তিনটি ফরম্যাটে লেখা হয়। ফরম্যাটগুলো হলো, কালানুক্রমিক, কার্যকরী ও সংমিশ্রণ। এর মধ্যে কালানুক্রমিক ফরম্যাটটি বহুল প্রচলিত এবং শেষটি হলো প্রথম দুটোর মিশ্রণ। আপনি আপনার অঞ্চলের প্রচলন ও এইচআরের চাহিদা অনুযায়ী ফরম্যাট ঠিক করবেন। পরবর্তী লেখায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখব। তবে একটি সফল রেজুমি লিখতে হলে এমপ্লয়ারের চাহিদা বুঝতে হবে, বিষয়বস্তু অগ্রাধিকার বুঝতে হবে। সঠিক টেমপ্লেট, ফন্ট, কিওয়ার্ড সমন্বয় করাসহ গ্রামার ও বানান নির্ভুল করতে হবে। আপনার রেজুমিটি যেন মানুষ ও রোবট উভয়ের জন্য লেখা হয়। অর্থাৎ এমপ্লয়ার যদি রেজুমি বাছাইয়ের জন্য যন্ত্র ব্যবহার করে এতেও যেন আপনার রেজুমি বাদ না পড়ে। রেজুমিতে যেসব বিষয়গুলো থাকা দরকার সেগুলো ক্রমানুসারে সাজান। আপনার অর্জনগুলো পজিশনের নিচে বুলেট আকারে দিন। প্রতিটি পজিশনে ২–৩টি অর্জন দিলে ভালো হয়। লেখা শেষ হলে বন্ধুবান্ধব বা ক্যারিয়ার প্রোফেশনাল দিয়ে দেখিয়ে নিন।

কীভাবে একটি উত্তম সিভি লিখব?

সিভি লেখার জন্য সঠিক ফরম্যাট নির্বাচন করুন। ফরম্যাট সাধারণত আপনার সিভি লেখার উদ্দেশ্য ও স্থানের ওপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন আপনি চাকরির জন্য সিভি লিখবেন না ফেলোশিপের সিভি লিখবেন আবার ইউরোপের জবের জন্য নাকি আফ্রিকার জবের জন্যই ধরনের বিষয়গুলো জড়িত। কিছু কিছু সিভিতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হয় আবার কিছু সিভিতে করতে হয় না। সিভিতে ফন্ট হিসেবে টাইমস নিউ রোমান, কালিব্রি, আরিয়াল ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট সাইজ ১০ থেকে ১২–এর মধ্যে রাখুন। সিভিতে যেসব বিষয়গুলো থাকা দরকার সেগুলো ক্রমানুসারে সাজান। আপনার অর্জনগুলো পজিশনের নিচে বুলেট আকারে দিন। প্রতিটি পজিশনে/ফেলোশিপে ২–৩টি অর্জন দিলে ভালো হয়। লেখা শেষ হলে বন্ধুবান্ধব বা ক্যারিয়ার প্রোফেশনাল দিয়ে দেখিয়ে নিন।

উদ্দেশ্য লিখব না পেশা সংক্ষেপ লিখব?

দেখুন, প্রতিটি রেজুমি লেখার আসল উদ্দেশ্য হলো চাকরি পাওয়া। এমনটি নয় যে কেউ রেজুমি লিখে শুধু মাত্র ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ আমাদের আসল উদ্দেশ্য হলো চাকরি। কেউ যদি আমার রেজুমি না নিয়ে, ইন্টারভিউ না নিয়ে চাকরি দেয় তাতেও আমি খুশি, তাই না? সুতরাং এমপ্লয়ারদের কাছে আপনার ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য কি বা কি করতে চান তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বর্তমান পজিশনের জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত। এ জন্য আধুনিক ক্যারিয়ার এক্সপার্টেরা উদ্দেশ্য না লিখে পেশা সংক্ষেপ লিখতে বলে। পেশা সংক্ষেপ লেখার নিয়ম আছে। প্রথমে আপনি কি এবং কোন পজিশনের জন্য আবেদন করছেন তার ওপর নির্ভর করে একটি টাইটেল লিখুন। যেমন ধরুন; একজন সেলস স্পেশালিস্টের টাইটেল হতে পারে বিটুবি সেলস স্পেশালিস্ট/ইনসাইড সেলস স্পেশালিস্ট/আউট সাইড সেলস স্পেশালিস্ট ইত্যাদি। আপনার জন্য যে টাইটেল প্রযোজ্য সেটি নির্বাচন করুন। এবার সে টাইটেলের নিচে আপনি কি এবং যে পজিশনের জন্য আবেদন করছেন সে পদে আপনি কেন শক্ত ক্যান্ডিডেট তা ৪–৫টি বাক্যের মধ্যে লিখুন। এটা হবে আপনার রেজুমির পেশার সারসংক্ষেপ।

রেজুমি না সিভি দেব?

আপনি যদি আমেরিকার কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেন তবে অবশ্যই রেজুমি পাঠান। বাকি সব ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেখুন। যদি তারা রেজুমি পাঠাতে বলে রেজুমি পাঠান, যদি সিভি পাঠাতে বলে তাহলে সিভি পাঠান। আমার উপদেশ হলো, আপনার রেজুমি, সিভি ও বায়ো তৈরি করে হাতের কাছে রাখুন। যখন যেটার প্রয়োজন পরে সেটা ব্যবহার করুন। সবার জন্য শুভ কামনা।

আ হ ম করিম : নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

​তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

Share this Post on