ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু জানেন না কিভাবে শুরু করবেন, কিভাবে শুরু করতে হবে না জানা একটি কমন সমস্যা। কানাডার একটি জরিপে দেখা গেছে ৮৪% উদ্যোক্তা জানেন না কিভাবে ব্যবসা শুরু করতে হয়। ব্যবসা শুরু করার প্রধান প্রতিবন্ধকতা গুলো হচ্ছেঃ
কিভাবে ফান্ডিং পেতে হয়, স্টার্টআপের বাজেট করতে হয়, আর ব্যর্থতা এড়ানোর ধাপ নিয়ে আমরা আগে কিছু আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।
এখানে আমরা দেখবো কিভাবে ব্যবসা শুরু করে তা না জানা থাকলে কি করতে হয়। ব্যবসা সেটাপ করার কিছু বেসিক এডমিনিস্ট্রেটিভ স্টেপ নিয়ে এখান আমরা আলোচনা করব।অবশ্য এখানে আমরা জেনারেল স্টেপস নিয়ে আলোচনা করব। ব্যবসার ধরণ ও আকার অনুযায়ী সেগুলো তারতম্য হবে সকল ব্যবসাতেই। এই জেনারেল গাইডলাইন জানার পরে, আপনি ধাপগুলো নিজে ব্যবসার জন্য মডিফাই করে নিতে পারবেন।
আপনার সিচুয়েশন যদি অনেক জটিল হয়, নিজে বুঝে উঠতে না পারেন, তাহলে প্রফেশনাল বা এক্সপার্ট কারো সহায়তা নিন। লোকাল ট্রেড ও ব্যবসায়িক অর্গানাইজেশন থেকেও আপনি এই ব্যাপারে সহায়তা পেতে পারেন।
ব্যবসা সেটাপ করার অনেক ভিন্ন ভিন্ন উপায় আছে। কোন উপায় সিলেক্ট করবেন, সেটার বিশাল প্রভাব আপনার ব্যবসায় পড়বে।যেমন সোল প্রোপ্রাইটর বিজনেস থেকে পার্টনারশিপের ব্যবসা ভিন্ন হবে। তাই ব্যবসার বিফলতায় নিজের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে আপনার সতর্ক হতে হবে। লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে পার্সোনাল ফাইন্যান্সিয়াল লায়াবিলিটির থেকে নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ থাকে। ট্যাক্স দেয়ার সময়ও কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এমন ব্যবসা সেটাপের জটিলতাও বেশি।
এ ছাড়াও অন্যান্য টাইপের ব্যবসা আছে, যেমন কর্পোরেশন, কোওপারেটিভ ইত্যাদি। বিভিন্ন টাইপের লিগ্যাল স্ট্রাকচার সম্পর্কে জানুন।
ব্যবসার নাম নির্বাচন অনেক সময় কঠিন হয়। নাম ছোট কিন্তু স্মরণীয় হওয়া ভালো। আবার অনলাইনে সেই নামের ডোমেইন পাবেন কিনা তাও চেক করতে হবে। আবার সেই নাম ব্যবসার কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও হতে হবে। তাই নামকরণের জন্য অনেক চিন্তাভাবনা করা লাগে। ধরেন, নাম নির্বাচন করলেন, এরপর কি করবেন? সরকারিভাবে সেই নাম রেজিস্টার করতে হবে। অনেক সময় এই কাজ অনলাইনেই করা যায়। দরকারে ব্যবসার নাম ট্রেডমার্কও করতে পারেন। সব সময় এটা করার দরকার হয়না।
সব ব্যবসারই টিন নিতে হয়। ট্যাক্স আইডি নাম্বার চেয়ে আবেদন করুন। সোল প্রোপ্রাইটর হলে এই কাজ নিজের টিন দিয়েই করতে পারেন। ব্যবসার জন্য কেনাবেচা করতে ও কর্মচারি ভাড়া করতে এই আইডি দরকার হবে। আর এতে করে ব্যাংকের সাথে লেনদেনেও সুবিধা হয়। যদি আপনি এক দেশে থাকেন, আর ব্যবসা অন্য কোন দেশে হয়, তাহলে সেটার নিয়ম কানুন জানতে কোন আইনজীবীর সাহায্য নিন।
আপনার ব্যবসা অনলাইনে না হলেও ব্যবসার জন্য একটি ডোমেইন কিনে ফেলুন। এটা আপনার ব্যবসার প্রফেশনাল ইমেজের জন্য ভালো হবে। সাইট সেটাপ করাও অনেক সহজ, ওয়ার্ডপ্রেস থিম কিনে ব্যবহার করতে পারেন। সাইট থাকলে ব্যবসার প্রতি কাস্টমার এট্রাকশন বাড়ে। কিন্তু এইসব করার আগে ডোমেইন কেনা লাগবে। টপ লেভেল ডোমেইন কেনায় কম্পিটিশন অনেক বেশি। তাই এই কাজে সময় নষ্ট করবেন না। এক্সাক্ট নাম না পেলে নামের আগে পরে কিছু লাগিয়ে ডোমেইন খুজুন। ডোমেইন রেজিস্ট্রারের ডোমেনেইন সাজেশনও দেখতে পারেন। কিন্তু এটা শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক এক্সটেনশনের জন্য কাজ করে। আর এই উপায়ে কিছু না পেলে, ডমকম্পের প্রিমিয়াম ডোমেইন নেম সিলেকশন থেকে একটা কিনতে পারেন। ( এরা প্রায় ৩০ টা ভিন্ন ভিন্ন রেজিস্ট্রারের সাথে কাজ করে ) সহজ কয়েক ধাপেই এখান থেকে ডোমেইন কিনে ফেলা যায়। এরপর আপনার দরকার হোস্টিং, হোস্টিং কিনে সেটার সাথে ডোমেইন নেম লিংক করুন।
কোম্পানির নাম ও ট্যাক্স আইডি করা শেষ? এরপর দরকার পারমিট ও লাইসেন্স। ব্যবসায় কি কি পারমিট ও লাইসেন্স লাগবে একটা লিস্ট করুন। এখন এইসব অনর্থক মনে হলেও, আইনি কাজে এগুলো ভবিষ্যতে কাজে আসবে। সরকারি খতিয়ানেও এগুলো কাজে আসে। নিজের দেশের সরকারি ওয়েবসাইট গুলো চেক করুন। দেখুন কি কি পারমিট দরকার। যেমন কানাডায় কানাডা বিজনেস নেটওয়ার্ক।
ব্যবসার জন্য আলাদা ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করুন। নিজের একাউন্ট ব্যবসার সব কাজে ব্যবহার করলে পড়ে ঝামেলা হতে পারে। তা না হলে পড়ে লাভ ক্ষতির হিসাবে সমস্যা হতে পারে। ট্যাক্স দেয়ার সময়ও অহেতুক সমস্যা দেখা দিবে। আর আলাদা একাউন্ট ব্যবহারে লিগ্যাল লায়াবিলিটিও কমে। সাধারণত, ব্যাংকগুলো বিজনেস একাউন্টের জন্য বেশি ফি চার্জ করে। কিন্তু ব্যাতিক্রমও আছে। বিভিন্ন ব্যাংকের খবর নিন। দেখুন আপনার বিজনেসের জন্য বেস্ট রেট কারা দিচ্ছে।
ব্যবসার কাজ শুরু হওয়ার আগেই, লাভ ক্ষতি ট্র্যাক করার জন্য, একটা বেসিক একাউন্টিং সিস্টেম সেটাপ করুন। একাউন্টিং জটিল কিছু না। আজকাল এই কাজ করতে অনেক অ্যাপ পাওয়া যায়। শুরুতে আপনার নিখুঁত কোন সিস্টেম লাগবে না। লাগবে একটা কাজ চালানোর জন্য সিস্টেম। ক্যাশ ফ্লো ট্র্যাক করতে পারলেই চলবে, পড়ে যখন ব্যবসা প্রসার হবে, তখন একাউন্টিং সিস্টেম আপগ্রেড করে নিলেই হবে।
একাউন্টিং এর পরেই আসে ইন্স্যুরেন্স। ইন্স্যুরেন্স কিন্তু একাউন্টিং এর মত জটিল না। ব্যবসার ধরণ বুঝে সহজেই একটা ইনস্যুরেন্স মডেল নির্বাচন করা যায়। একেক টাইপের কোম্পানির জন্য একেক টাইপের ইন্স্যুরেন্স লাগে। কোন কোম্পানির হয়ত ভিহেকেল ইনস্যুরেন্স লাগে, অন্য এক ব্যবসায় লাগে লায়াবিলিটি ইনস্যুরেন্স।
আপনার পরিস্থিত উপর ভিত্তি করে এক্সট্রা কয়েক ধাপ কাজ করতে হতে পারে। যেমন, ব্যবসার অফিস লোকেশন নির্বাচন। বা কর্মচারি খোঁজা। আর স্থান ভেদে একেক দেশের ব্যবসার জন্য একেক রকম নিয়ম থাকে।
এখানে আমরা কিছু এডমিনিস্ট্রেটিভ ধাপ কভার করেছি। আপনি এখানে যা যা শিখলেনঃ
মনে রাখবেন, এগুলো কিছু জেনারেল গাইডলাইন। ব্যবসা শুরু করার পরে আরও অনেক কিছু সেটাপ করতে হবে।