শুধুমাত্র ছবি আপলোড এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাই নয়, চাইলেই ফেসবুককে ব্যবহার করতে পারেন আয়ের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে। ফেসবুক থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। একটা ফ্যানপেজ তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন পোস্ট বিক্রি করেও আয় করা যায়। এমনকি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও পণ্য বিক্রি করেও ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন সহজেই।
ফেসবুকে ১.৯৪ বিলিয়ন অ্যাকটিভ ইউজার রয়েছে। এর মানে আপনি চাইলে মুহূর্তেই এই বিপুল সংখ্যক জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন আপনার ব্যবসায়িক খাতটি। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময় যে কোন কারো কাছে পৌঁছে দিতে পারেন যে কোন ছবি, ভিডিও, বিজ্ঞাপন এবং বিক্রি করতে পারেন যে কোন পণ্য।
ফেসবুক থেকে আয় করার অসংখ্য উপায় থেকে সেরা ১০টি উপায় নিয়ে সাজানো আজকের পোস্ট। আশা করি, এ উপায়গুলো কাজে লাগিয়ে অন্য অনেকের মত আপনিও আয় করতে পারবেন ফেসবুক থেকে।
ফেসবুক জুড়ে এখন বিভিন্ন পেজের বিস্তার। পেজ থেকে আয় করতে যা করবেন –
আপনার যদি ইতিমধ্যেই কোন ফ্যান পেজ না থাকে তবে প্রথমেই একটি ফ্যান পেজ তৈরি করে নিন। এটি যেকোন ধরনের পেজ হতে পারে। আপনি নিজে এবং অন্যরা আগ্রহী এমন যে কোন পেজ তৈরি করতে পারেন। যেমন : ফানি পেজ, ট্রাভেলিং পেজ, ট্রল পেজ ইত্যাদি।
পেজ খোলার পর আপনার প্রথম কাজই হচ্ছে অন্যান্য ফেসবুক ইউজারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এর জন্য আপনাকে মানসম্মত কনটেন্ট পোস্ট করে যত বেশি সম্ভব পেজটাকে অ্যাংগেজ রাখতে হবে। যখনই আপনার পেজটি ভালো সাড়া পেতে শুরু করবে, অর্থাৎ লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হবে আশানুরূপ, তখনি আপনি পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তত হবেন।
এখন আপনার একটি বড় ফ্যান পেজ আছে। অথচ এখনো নিশ্চিত নন কীভাবে ফেসবুক থেকে আয় হবে! ফেসবুক থেকে আয় এর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পেজের পোস্টগুলো বিক্রি করা।
আপনি যদি একজন অ্যাফিলিয়েট হিসেবে কোন কোম্পানির মার্কেট করতে চান, তবে কোম্পানির সাইট সার্চ দিয়ে রিকয়্যারমেন্ট ফর্ম পূরণ করুন। এটা আপনি ফ্রি ভাবে এবং অল্প সময়েই করতে পারবেন।
প্রত্যেকটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের জন্য আলাদা আলাদা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলুন। এতে কোন ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক একটি পেজ থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন খুঁজে বের করতে হবে না। বরং নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোনটাকে ফলো করতে পারবে।
প্রতিদিন পোস্ট করুন এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করুন নিখুঁত ভাবে। ফলোয়ার বাড়ানোর মাধ্যমেই প্রচার বাড়ানো সম্ভব। যখন কেউ আপনার পোস্টে ক্লিক করবে এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট থেকে কিছু কিনবে, আপনি আয় করবেন।
ফ্রিল্যান্সিং জব পাওয়ার জন্য ফেসবুকে নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপ আছে। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয় নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। যেমন : ফ্রিল্যান্স রাইটিং, ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি , ফ্রিল্যান্সিং সোশাল মিডিয়া ওয়ার্ক ইত্যাদি। তবে গ্রুপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো গ্রুপের মধ্য থেকে সবচেয়ে অ্যাকটিভ গ্রুপটি নির্বাচন করে নেয়াই আপনার দায়িত্ব।
ফেসবুক থেকে আয় এর জন্য এটি অত্যন্ত সহজ এবং সুলভ একটি পদ্ধতি। অনলাইনে এমন অনেক গ্রুপ আছে যারা নিজেদের ব্যবসার প্রসার বা পরিচিতির জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কনটেস্টের আয়োজন করে। এদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে নিজর গ্রুপ, পেজ, পণ্য বা কোম্পানির পরিচিতি বাড়ানো। কারণ ফেসবুকে বিনামূল্যে ভিজিটর পাওয়া যাচ্ছে এবং ভাইরাল হওয়ার মতো একটা অপশন তো আছেই!
এ সমস্ত কনটেস্টে আপনার কাজ হবে সর্বোচ্চ সংখ্যক বন্ধুদের ট্যাগ দেয়া, ইনভাইট করা, লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার প্রচার সম্পন্ন করা। আপনার পারফরমেন্সের ওপর আপনাকে কনটেস্টে উইনার ঘোষণা করা হবে এবং এখান থেকে প্রাইজ হিসেবে আপনি আয় করতে পারেন সহজেই।
অন্যদের গ্রুপে কাজ না করে আপনি চাইলে নিজেই একটি গ্রুপ খুলে নিতে পারেন বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য। এক্ষেত্রে আপনার ফ্রেন্ডস-ফলোয়ার বেশি হলে প্রচারের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন বেশি। এরকম ব্যবসায়িক গ্রুপ ফেসবুকে এখন অহরহ। গ্রুপে আপনি বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য বিক্রি করতে পারেন। যেমন : ড্রেস, জুয়েলারি, ফার্নিচার, খেলনা ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি পণ্যের ছবি সহ দাম লিখে গ্রুপে পোস্ট করবেন। আপনার ক্লায়েন্টরা নিজস্ব পছন্দ এবং বাজেটের মধ্য থেকে পণ্য নির্বাচন করে নিয়ে বিকাশ বা অন্যান্য সহজ পদ্ধতিতে দাম পরিশোধ করে দিবে। আপনাকেও কুরিয়ার বা অন্যান্য সুবিধাজনক পরিবহন সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট পণ্য পৌঁছে দিতে হবে যথাযথ সময়ে। এক্ষেত্রে নিজের গ্রুপটি যথা ব্যবসাকে আরো বড় করতে চাইলে একই রকম ব্যবসায় নিয়জিত এমন অন্যান্য বন্ধুদের সাথে মিলে কাজ করতে পারেন।
ফেসবুক অ্যাপ ডেভলপার হিসেবে আপনি ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন। অথবা তৈরি করতে পারেন নিজস্ব ফেসবুক অ্যাপ। বিভিন্ন গেমিং কোম্পানি যেমন : Zynga, Popcap. ইত্যাদি থেকে নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করতে পারেন যদি কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে থাকেন।
কম্পিউটার অ্যাপ পেভলপিংয়ে দক্ষ নন! তাতে কী! আপনি চাইলেই একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে আপনার সাধারণ ফেসবুক প্রোফাইল থেকেই আয় করতে পারেন। যদি আপনার ওয়ালের পোস্টগুলোতে মানসম্মত লাইক, কমেন্ট, শেয়ার থাকে তবে একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ফেসবুক থেকে আয় করা আপনার জন্য সহজ হবে।
এমনকি আপনার যদি যথেষ্ট সংখ্যক ফ্যান-ফলোয়ার থাকে এবং আপনার নিজস্ব প্রোফাইলে তাদের সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে BlogMint অথবা Fromote এ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাকাউন্টে সাইন আপ করে আয় করতে পারেন সহজেই।
সাইন আপ করার পর আপনার প্রোফাইলের তথ্য দিয়ে একটা ফর্ম পূরণ করবেন এবং ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিজস্ব প্রাইস নির্ধারণ করে দিবেন। উদাহরণ স্বরূপ, কোন একটা ব্র্যান্ডের প্রত্যেক পোস্টের জন্য আপনি ৫০০০ টাকা নির্ধারণ করতে পারেন।
যে কোন সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ফ্যান পেজ কেনা-বেচার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Viral Accounts এ নিজের পুরাতন অ্যাকাউন্ট বিক্রি করেও আপনি ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন। আগে একের অধিক অ্যাকাউন্ট খোলার একটা ট্রেন্ড চালু ছিল। কিন্তু এখন মার্কেটাররা সেই পুরোনো অ্যাকাউন্টগুলো কিনতে আগ্রহী। কারণ ফেসবুকে পুরোনো অ্যাকাউন্টের গুরত্ব বেশি।
একইভাবে, ফ্যান-ফলোয়ারের ওপর ভিত্তি করে আপনার পুরোনো ফেসবুক গ্রুপ বা পেজও বিক্রি করতে পারেন এখানে।
অনলাইনে জিনিসপত্র বিক্রির জন্য Facebok Shop একটা অসাধারণ অ্যাপ। আপনার যদি ই-কমার্স স্টোর, ছোটখাট ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন। এই অ্যাপের ফ্রি এবং পেইড ভার্সন আছে। ফ্রি ভার্সনটা লিমিটেড।
GarageSale অ্যাপ Buy.com এর সাথে সংযুক্ত। এখানে আপনি আপনার পুরাতন জিনিসপত্র বিক্রি করে কিছু অতিরিক্ত আয় করতে পারবেন।
ফেসবুকের মতো বহুল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি এখন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হচ্ছে এটি সর্বজনগৃহীত এবং প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের জন্য নিজের অবস্থান ও দক্ষতা অনুযায়ী আয়ের সুযোগ এখানে অব্যহত। আগ্রহী যে কেউ নিজের মেধা ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন সবসময়।